ইন্টারনেট ব্যাংকিং কি এবং কেন? | What is Internet Banking and Why is It Important?

ইন্টারনেট ব্যাংকিং কি এবং কেন? | What is Internet Banking and Why is It Important?

ইন্টারনেট ব্যাংকিং একটি ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা, যা গ্রাহকদের তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, লন লোন পরিচালনা, লেনদেন সম্পন্ন করা এবং অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন করার সুযোগ দেয়, শুধুমাত্র একটি ইন্টারনেট কানেকশন এবং একটি কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা ব্যাংক শাখায় উপস্থিত না থেকেও তাদের ব্যাংকিং প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ করতে পারেন নিমিষেই।

 ইন্টারনেট ব্যাংকিং একটি যুগান্তকারী সেবা যা গ্রাহকদের সুবিধাজনক, সাশ্রয়ী, এবং নিরাপদ ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এটি গ্রাহকদের ব্যস্ত জীবনযাপনে সহজে ব্যাংকিং সেবা পেতে সহায়তা করে, পাশাপাশি নানা ধরনের লেনদেন সহজ, দ্রুত এবং সুরক্ষিতভাবে সম্পন্ন করতে পারে।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং (Internet Banking) একটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন, আই ব্যাংকিং (iBanking), অনলাইন ব্যাংকিং (Online Banking) বা ব্যাংকিং অন দ্য গো (Banking on the Go) নামেও পরিচিত। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লোকজন অযথা ক্যাশ টাকা বহন করা থেকে থেকে বিরত থাকতে পারেন, যা টাকা স্থানান্তর ও লেনদেনের ক্ষেত্রে আরো নিরাপদ এবং সুবিধাজনক। পাশাপাশি এটি, গ্রাহকদের তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ২৪/৭ ব্যবহারের স্বাধীনতা দেয়, যা শাখার কাজের সময়ের বাইরে কোনো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

 বাংলাদেশে সম্প্রতি ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারের জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফরেন কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো ছাড়াও, তালিকাভুক্ত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও এখন ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্টারনেট ব্যাংকিং চ্যানেল গুলো হচ্ছে, সিটি ব্যাংকের সিটিটাচ, ব্র্যাক ব্যাংকের- আস্থা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের -অনলাইন ব্যাংকিং, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এর সেলফিন, ডাচ বাংলা ব্যাংকের - নেক্সাস পে, ইস্টার্ন ব্যাংকের - স্কাই ব্যাংকিং ইত্যাদি।

একজন ব্যাংক একাউন্ট/কার্ড হোল্ডার কে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারের জন্য গ্রাহককে প্রথমে তার ব্যাংকের মনোনীত ওয়েবসাইট বা ব্যাংক অ্যাপ্লিকেশনে ব্যাংকের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সাইন আপ করতে হয়। এরপর, গ্রাহক তার ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন কোড) দিয়ে লগইন করে ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যালেন্স চেক করা, স্টেটমেন্ট অনুসন্ধান, ফান্ড ট্রান্সফার, বিল পেমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, ওয়ালেট ট্রান্সফার, একাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত সেবা ইত্যাদি গ্রহণ করা যায়।

 ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের সুবিধাসমূহ:

সুবিধাজনক: ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারকারীকে ব্যাংকে যাওয়ার প্রয়োজন ছাড়াই যে কোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে তার ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দেয়। এটি বিশেষ করে ব্যস্ত গ্রাহকদের জন্য খুবই উপকারী।

সময় সাশ্রয়: গ্রাহকদের জন্য ব্যাংক শাখায় গিয়ে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয় না। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তারা মুহূর্তের মধ্যে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারেন।

২৪/৭ উপলব্ধতা: ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা ২৪ ঘণ্টা, ৭ দিন উপলব্ধ থাকে। সপ্তাহান্তে বা সরকারি ছুটির দিনেও গ্রাহকরা ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারেন।

সহজ ফান্ড ট্রান্সফার: গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে কোনো সময় এবং যেকোনো জায়গা থেকে টাকা ট্রান্সফার করতে পারেন, এবং ব্যাংক থেকে ব্যাংক বা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ট্রান্সফার সহজে করা যায়।

নিরাপত্তা: ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে সাধারণত শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকে, যেমন পাসওয়ার্ড, OTP, দুই স্তরের নিরাপত্তা (2FA), যা গ্রাহকের তথ্য নিরাপদ রাখে।

পরিবেশবান্ধব: সকল লেনদেন ডিজিটালি হওয়ায় কাগজের ব্যবহার কমে, এবং এটি পরিবেশ বান্ধব।

বিশ্বব্যাপী প্রবেশাধিকার: ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করতে পারেন। এটি আন্তর্জাতিক লেনদেনও সহজতর করে।

পরিশেষে, আমরা যারা চলমান প্রযুক্তি নির্ভর যুগে বাস করছি, যেখানে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার ছাড়া কোনো কিছুই সহজ হয় না। ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহকদের এই প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণের সুযোগ দেয়। যার ফলে, অনেক দূরবর্তী বা প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের জন্য ব্যাংক শাখায় পৌঁছানো যেখানে কঠিন হয়ে পড়ে, সেখানে, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর কল্যাণে তাদের জন্য ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য করে। এই সেবা প্রবর্তনের মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা আরো ডিজিটাল এবং প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে, যা একসময় আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠবে।

নবীনতর পূর্বতন